Looking For Anything Specific?

ads header

জাদুর ফুলদানি – আহমাদ মাযহার |রূপকথার গল্প | chotoder bangla golpo

জাদুর ফুলদানি – আহমাদ মাযহার |রূপকথার গল্প | chotoder bangla golpo

chotoder bangla golpo thakurmar jhuli chotoder bangla golpo pdf chotoder bangla golpo teko bou bangla chotoder golpo book free download bangla chotoder mojar golpo pdf chotoder bangla bhuter golpo chotoder bangla vuter golpo pdf chotoder bangla vuter golpo chotoder mojar bangla golpo


দামাস্কাস শহরে বাস করত তিন বােন. সেই তিন বোনের বাবা ছিল এক তাঁতি, তাঁতির ছিল দুই বউ। বড় বউয়ের দুই মেয়ে আর ছােট বউয়ের এক মেয়ে। বড় বউয়ের মেয়ের বয়সেও বড়। তিন বোনই খুব রূপবতী । তবে ছােটটির রূপের বুঝি তুলনাই মেলে না। তার বড় দুই বােনদের মন-ভরা শুধু হিংসা আর হিংসা । সারাক্ষণ তক্কে তক্কে থাকত কীভাবে ছোট বােনটাকে কষ্ট দেয়া যায়।

ছোট বােনটা সবার চেয়ে যেমন সুন্দর, মনটাও তেমনি পবিত্র । মানুষের দুঃখ-কষ্টে ভরে উঠত তার মন, ভুলে যেত নিজের দুঃখ! মন-ভরা শুধু ভালােবাসা আর ভালােবাসা।

তাঁতি আর তার বউয়েরা কিছুদিনের মধ্যেই মরে গেল। তিন বােনের দেখাশােনা করার জন্য আর কেউ রইল না । তিন বোনই হাতের কাজ জানত। কাপড় বানিয়ে সেগুলাে বিক্রি করে দিন চালতে লাগল তারা ।

একদিন বাজার থেকে ছােট বােন একটা ছোট্ট ফুলদানি কিনে বাড়ি ফিরল । ফুলদানিটা ছােট হলেও দেখতে খুবই সুন্দর । ওটা দেখে দুই বোন আজেবাজে পয়সা খরচের জন্য খুব রাগারাগি আর গালমন্দ করল ছােট বােনকে । বকা শুনেও কিছু বলল না ছােট বােন। ফুলদানিটা আসলে ছিল জাপুর ফুলদানি। ফুলদানিটার সামনে দাঁড়িয়ে মজার মজার খাবার বা সুন্দর সাজপােশাক চাইলে সে সব এসে হাজির হয়। ছােট বোনটি ফুলদানির এই জাদুশক্তির কথা কাউকে বলেনি। প্রতিদিন গভীর রাতে যখন বড় বােনেরা ঘুমিয়ে পড়ত তখন সেই জাদুর ফুলদানি বের করত ছোট বোন। মজার মজার খাবার খেত। সুন্দর করে সাজত ; যত দামি অলংকারই সে পেতে চাইত সব এই ফুলদানি তাকে এনে দিত।

রাতে ছােট বােন খুব সুন্দর করে সাজত ; তখন কী যে অপরূপ লাগত তাকে! মনে হত গরিব তাঁতির ঘরে যেন জ্যোত্মার মায়াবী আলো নেমে এসেছে। ছােট বোনটির হাসি যেন হয়ে উঠত হিরে-মুক্তোর ঝলমলানি কিন্তু এই সুন্দর রূপ আর কাউকে দেখাতে পারত না সে। কারও কাছে মন খুলে বলতে পারত না তার এই জাদুর ফুললিটার কথা ।

একদিন বাদশাহর পাইক-বরকন্দাজরা দেশজুড়ে ঢােল বাজিয়ে জানিয়ে দিয়ে গেল শাহজাদির বিয়ের খবর। শাহজাদির বিয়েতে সবার নিমন্ত্রণ। বড় দুইবোন সংবাদ শোনামাত্র নিমন্ত্রণ খেতে যাবার জন্য ব্যস্ত হয়ে পড়ল । তারা একবারটি খোজ পর্যন্ত নিতে চাই না ছােট বােনের ; খুব মন খারাপ হল তার ।

সন্ধেয় বড় বােনেরা ভালো ভালো কাপড় আর গয়না পরল । খুব করে সেজেগুজে গেল বাদশাহর মহলে : শাহজাদির বিয়ে দেখার জন্য তাদের সে কী ব্যকুলতা!

আর ছােট বােন? সে বাড়িতে রইল একা । অনেকক্ষণ পর ছােট বােন জাপুর ফুলদানির কাছে চাইল দামি পােশাক আর গয়না। সাজগােজ শেষ হবার পর তাকে খুব সুন্দর লাগল । মনে হল বেহেশত থেকে যেন হুর-পরী নেমে এসেছে । ছোট বােনটি বাদশার প্রাসাদে এসে পৌছলে যেন সারা প্রাসাদ ঝলমল করে উঠল । সবাই বলাবলি করল, নিশ্চই সে কোনও দেশের শাহজাদি। বিয়ে উপলক্ষে সেখানে চলছিল গান-নাচ-বাদ্য আর আনন্দ-ফুর্তি।

খাওয়া-দাওয়া শেষ হবার আগেই তড়িঘড়ি চুপিসারে ঘরে ফিরে এল ছােট বােন। বড় বােনদের আগে ঘরে ফিরতে হবে । না হলে তাে ফুলদানির রহস্য ফাস হয়ে যাবে । সাজ-পোশাকও আবার ফুলদানিকে বুঝিয়ে দিতে হবে। বড় বােনেরা চলে আসার আগে সব কিছু করতে হবে । খুলে রাখতে গিয়ে ছোট বোন দেখল তার বাঁ পায়ের মল নেই। এই অন্ধকারে এখন মল কোথায় পাবে? খুঁজতে গেলে দেরি হয়ে যাবে । কী আর করা! বাঁ পায়ের মল ছাড়াই সবকিছু ফিরিয়ে দিল ফুলদানির কাছে । জাদুর ফুলদানির কাছে মাফ চেয়ে নিল।
পরের দিন। প্রতিদিনের মতো ভোরবেলা শাহজাদা বেরুবে প্রাতঃভ্রমণে, ঘােড়ার পিঠে চেপে ঘুরতে খুব ভালােবাসেন তিনি। ঘােড়ায় চড়ার জন্য আস্তাবলে এলেন । দেখলেন সব সহিস মিলে জটলা পাকিয়ে আছে। কী যেন একটা নিয়ে কথা বলাবলি করছে। শাহজাদাকে দেখে সরে গেল সবাই । একজনের হাতে তিনি দেখতে পেলেন একটা অলংকার ।

লােকটা জানাল এ অলংকার সে এখানে কুড়িয়ে পেয়েছে। শাহজাদা অলংকারটা দেখে বুঝতে পারলেন এটা নিশ্চয়ই কোনও শাহজাদির পায়ের মল । হিরের তারা বসানাে অলংকারটি যেমন দামি তেমনি সুন্দর এর নকশার ধরন । শাহজাদা মনে মনে ভাবলেন এই মল যার পায়ে ছিল না জানি সে কত সুন্দর!

এই মল পাবার পর থেকে শাহজাদা শুধু চুপচাপ বসে থাকেন। মলটা যার পায়ে পরা ছিল শুধু তার রূপের কথা ভাবেন। দিন দিন শাহজাদা আত্মভোলা হয়ে পড়তে লাগলেন। বাদশাহর নজরে এল ব্যাপারটা। ছেলের মনের কথা ভেবে বাদশাহ তাঁর পাইক-বরকন্দাজদের ডাকলেন। ওই মল যার পায়ের শোভা সেই মেয়েটিকে খুঁজে আনতেই হবে। নিশ্চয়ই শাহজাদির বিয়ের সময় বৌভাতে-আসা কোনও শাহজাদির পা থেকে খুলে পড়েছিল এই মল।

পাইক-বরকন্দাজ, সান্ত্ৰি-সিপাই অনেক খুঁজেও সেই মল-এর মালকিনকে খুঁজে পেল না। সিপাই-সান্ত্রিরা ফিরে এসে সংবাদ দেয় মল-এর মালকিনকে খুঁজে পাওয়া যাচ্ছে না । আরও মন খারাপ হতে থাকে শাহজাদার । এসব দেখে শাহজাদার মা বাদশাহকে বললেন, দেশের প্রতিটি ঘরে রাজার গুপ্তচর পাঠিয়ে দিন। খুঁজে বের করতেই হবে মেয়েটিকে। বাদশাহ সায় দিলেন বেগমের কথায় ।

যেই বলা সেই কাজ । গুপ্তচরেরা ঘরে ঘরে গিয়ে খুঁজতে লাগল । খুজতে খুঁজতে কয়েকজন গুপ্তচর এসে হাজির তিন বােনের বাড়িতে । তিন বােনের পা দেখে গুপ্তচরেরা বুঝতে পারল সেই মল ছােট মেয়েটির পায়েরই হবে। তারা জেরা শুরু করল তিন বােনকে। প্রথমে আমতা আমতা করে অস্বীকার করল । শেষ পর্যন্ত ধরা পড়ে গেল ছােট বােন ।

আর কী! ধুমধাম শুরু হল দেশময়। সাজ সাজ রব পড়ে গেল চারদিকে। বাদ্যি বাজল বাদশাহর প্রাসাদে। বিয়ে হয়ে গেল শাহজাদার সঙ্গে ছােট বােনের । হিংসায় জ্বলে মরতে লাগল বড় দুই বােন। কিন্তু ছোট বােন তাে লক্ষ্মী মেয়ে, সুন্দর মনের মানুষ। প্রাসাদে যাবার সময় বােনদেরও ডেকে নিতে ভুল না।

চল্লিশ দিন ধরে চলল শাহজাদা আর ছােট বােনের বিয়ের আনন্দ। এই আনন্দের সমুদ্রে ভাসতে ভাসতে ছােট বােনটা ভাবল, তার তাে আর কোনও দুঃখ নেই, নেই কোনও কিছুর অভাব। তাহলে এই জাদুর ফুলদানি দিয়ে কী হবে আর? বােনেরা গরিব। ফুলদানি তাদের দিয়ে দিলে কেমন হয়? যেই ভাবা সেই কাজ। ফুলদানিটা তাে বােনদের দিলই, সেই সঙ্গে ফুলদানির গুপ্ত রহস্যও বলে দিল।

একদিন। ছােট বােন অনেকক্ষণ ধরে গােসল করল। তারপর সাজতে বসল বড় বােনদের সঙ্গে। বড় বােনেরা যত্ন করে, পরিপাটি করে সাজাতে লাগল তাকে। বোনেরা তার মাথায় একটা ঝুঁটি বেঁধে দিল । এক এক করে আটটা চুলের কাঁটা গেঁথে দিল সেই ঝুঁটিতে। যেই না শেষ কাঁটাটা ঝুঁটিতে গাঁথা হয়ে গেল, অমনি একটা ছােট্ট বুলবুলি হয়ে গেল ছােট বােন। বড় বােনেরা হুশ হুশ করে তাড়িয়ে নিল বুলবুলি পাখিটাকে। তারপর তার প্রাসাদ থেকে নিজেদের বাড়িতে ফিরে এল হিংসুটে বড় বােনেরা।

সারাদিন কাজের শেষে ঘরে ফিরে এসে সেই ছোট বােনটিকে খুঁজে পেল না শাহজাদা । সারা প্রাসাদ তন্ন তন্ন করে খুঁজল পাওয়া গেল না তাকে । হিংসুটে বড় বােনেরা প্রাসাদে এসে আবার ইনিয়ে বিনিয়ে কান্নাকাটি করতে লাগল । কেন যে ছােট বােনটা শাহজাদার বউ হতে গেল, তাই তাে আজ তাকে খুঁজে পাওয়া যাচ্ছে না।

শাহজাদা তো রােজ খুঁজতে বের হন ছােট বােনটাকে । ক্লান্ত হয়ে সন্ধেবেলা ঘরে ফেরেন । চুপচাপ বসে থাকেন মনমরা হয়ে। হঠাৎ একদিন লক্ষ করলেন একটা ছােট্ট বুলবুলি পাখি কিচির মিচির করে কী যেন বলছে । মানুষ তাে আর পাখির ভাষা বােঝে না! শাহজাদা বুঝবেন কী করে! অসীম মমতায় হাত বাড়িয়ে ধরলেন পাখিটাকে। কিন্তু হাত বাড়িয়ে ধরতে যাবার পরও উড়ে গেল না পাখিটা। যেন গুটিসুটি মেরে শাহজাদার বুকের কাছে এগিয়ে এল । শাহজাদা প্রতিদিন বুলবুলিকে খাবার দেন, আদর করেন। বুলবুলি পাখিটাও সারাক্ষণ শাহজাদার কাছেই থাকে।

একদিন ! হঠাৎ শাহজাদা দেখলেন বুলবুলি ঝুঁটিতে চুলের কাটার মতাে কী যেন আটকে আছে কয়েকটা। কি যেন ভেবে সে একটা কাঁটা ধরে একটু টান দিতেই খুলে এল কাঁটাটা । বুলবুলিও যেন খুশি হল । শাহাজাদা এরপর একে একে আটটা কাটাই খুলে নিলেন ঝুঁটি থেকে। শেষ কাঁটাটা খুলে ফেলতেই সেই ছােট্ট বুলবুলি হয়ে গেল তিন বােনের সেই ছােট বােনটি।

শাহজাদার আনন্দ আর দেখে কে? যেন হারিয়ে যাওয়া চাঁদটাকে খুঁজে পেয়েছেন ফের। কত যে আনন্দ করলেন শাহজাদা! ছােট বােনের মন এতই ভালাে যে সব বুঝেও বড় বােনদের এই অন্যায়ের কথা শাহজাদাকে বলে দেয়নি। অথচ বড় বােনেরা জাদুর ফুলদানির কাছ থেকে জাদুর কাঁটা চেয়ে নিয়ে ছােট বােনকে পাখি বানিয়ে রেখেছিল । যার মন সুন্দর, মহৎ সে তাে এমনই করবে; সে ক্ষমা করবে মানুষকে। যার মন কুৎসিৎ সে কোনও-না-কোনও ভাবে শান্তি পেয়ে যাবে । ছােট বােন শাস্তি না দিলেও তিল তিল করে শাস্তি পেয়েছিল ওরা সারাজীবন। এরপর থেকে ছােট বােনের জীবন কেটে যাচ্ছিল অনেক সুখে আর আনন্দে..।

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

0 মন্তব্যসমূহ